নিজস্ব সংবাদদাতাঃ র‍্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধের উৎস উদঘাটন, অপরাধীদের গ্রেফতার, আইন-শৃঙ্খলার সামগ্রিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিভিন্ন অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্য র‍্যাব ফোর্সেস নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে থাকে। জঙ্গি, মাদক, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, সাজাপ্রাপ্ত আসামী ও বিভিন্ন অপরাধীকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে র‍্যাব-১১ নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছে। গত ০৭ মে ২০২৩ইং তারিখে সাংবাদিকদের সাথে ছেলের মৃত্যু সংবাদের বিষয়ে কথা বলার সময় কুমিল্লা জেলার কোতয়ালী মডেল থানাধীন মধ্যম মাঝিগাছা গ্রামের বাসিন্দা হিরন মিয়া হঠাৎ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। বিষয়টি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক হওয়ায় আমরা ছায়াতদন্ত শুরু করি। তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, কুমিল্লা জেলার কোতয়ালী মডেল থানাধীন মধ্যম মাঝিগাছা গ্রামের রোশন মিয়া @ মুজা মিয়া’র মেয়ে তন্বী আক্তারের সাথে স্থানীয় চা দোকানদার হিরন মিয়া’র পুত্র মোহাম্মদ মাহিনের প্রায় ০১ বছরের প্রেমের সম্পর্ক চলমান ছিল। কিন্তু মেয়ের পরিবারের পক্ষ হতে তাদের এ সম্পর্ক মেনে নেওয়া হয়নি যার ফলে মেয়ের পরিবারের লোকজন বিভিন্ন সময় ভিকটিম মাহিনকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধামকিসহ ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছিল। এরই জের ধরে গত ০৪ মে ২০২৩ইং তারিখ রাতে মেয়ের বাবা রওশন মিয়া @ মুজা মিয়া ও মেয়ের চাচা জাহাঙ্গীর আলম ভিকটিম মাহিনকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ডেকে এনে বেধড়ক মারধোর করে। এসময় তারা ভিকটিম মাহিনের মাথায় ও বুকে আঘাত করে। গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় লোকজন ভিকটিম মাহিনকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করায়। হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা ও ছাড়পত্র প্রদানের পর গত ০৫ মে ২০২৩ইং তারিখ ভিকটিমের পরিবারের লোকজন ভিকটিমকে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসে এবং বাড়িতে রেখে সেবা শুশ্রুষা করতে থাকে। পরবর্তীতে গত ০৭ মে ২০২৩ইং তারিখ দুপুরে ভিকটিম মাহিন হঠাৎ অসুস্থ বোধ করলে পরিবারের লোকজন পুনরায় তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় ও কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। ছেলের মৃত্যুতে শোকাহত বাবা হিরন মিয়া অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে পরিবারের লোকজন তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকেও মৃত ঘোষনা করে। উক্ত ঘটনা জানাজানি হলে মেয়ের বাবা, মেয়ের চাচা ও পরিবারের লোকজন বাড়ি তালাবদ্ধ করে আত্নগোপনে চলে যায়। এ ঘটনায় ভিকটিম মাহিনের মা রুজিনা বেগম গত ০৭ মে ২০২৩ইং তারিখ রাতে বাদী হয়ে কুমিল্লা জেলার কোতয়ালী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার নিমিত্তে আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করি। গোয়েন্দা তথ্য ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় মামলা রুজুর ০৪ ঘন্টার মধ্যে গত ০৭ মে ২০২৩ইং তারিখ রাতে কুমিল্লা জেলার কোতয়ালী মডেল থানা এলাকা হতে উক্ত মামলার ০১ নং এজাহারনামীয় আসামী রওশন মিয়া @ মুজা মিয়া (৪০), পিতা- মৃত রঞ্জু মিয়া, সাং- মধ্যম মাঝিগাছা (ফুল মিয়ার বাড়ী), ০৭ নং ওয়ার্ড, ০৪ নং ইউনিয়ন, থানা- কোতয়ালী মডেল, জেলা- কুমিল্লা ও ০২ নং এজাহারনামীয় আসামী জাহাঙ্গীর মিয়া (৩২), পিতা- মৃত রঞ্জু মিয়া, সাং- মধ্যম মাঝিগাছা (ফুল মিয়ার বাড়ী), ০৭ নং ওয়ার্ড, ০৪ নং ইউনিয়ন, থানা- কোতয়ালী মডেল, জেলা- কুমিল্লা’দ্বয়কে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়কে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও অনুসন্ধানে জানা যায়, মেয়ের বাবা ও তার পরিবারের লোকজন মেয়ে তন্বীর সাথে নিহত ভিকটিম মাহিনের সম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি। এরই প্রেক্ষিতে মেয়ের বাড়ির লোকজন প্রাথমিকভাবে ভিকটিম মাহিনকে বার বার তাগাদা দিলেও ভিকটিম মাহিন তার প্রেমের সম্পর্ক চালিয়ে যেতে থাকে। তাই আসামীদ্বয় ক্ষিপ্ত হয়ে ভিকটিম মাহিনকে অমানুষিক নির্যাতন করে মর্মে দায় স্বীকার করে। গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়ের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কুমিল্লা জেলার কোতয়ালী মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।