যুগের নারায়ণগঞ্জ:
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে কাঁচপুর এলাকায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নারায়ণগঞ্জ জেলার উদ্যোগে ফিলিস্তিনের গাজায় নির্বিচারে মানুষ হত্যার প্রতিবাদে সভা ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিশাল এলাকাজুড়ে কাঁচপুর ওভারব্রিজের নিচে অবস্থান নেয় এবং পরে ঢাকা- চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
সোমবার (৭ এপ্রিল) বিকেল ৫টায় সোনারগাঁওয়ে কাচঁপুর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিলের বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য ও ইসলামিক এডুকেশন সোসাইটির পরিচালক অধ্যক্ষ ড. মো. ইকবাল হোসাইন ভূঁইয়া বলেন, অনতিবিলম্বে গাজায় মুসলিম নিধন বন্ধ করতে হবে।
ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) কর্তৃক গাজার নিরীহ নারী ও শিশুসহ বেসামরিক মানুষের ওপর অবিরাম হামলা, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস এবং ঘরবাড়ি, হাসপাতাল ও স্কুলে পরিকল্পিতভাবে আঘাত হানা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও মানবতাবিরোধী আইন লঙ্ঘনের সামিল। নিরীহ মানুষ হত্যা, পরিবার উচ্ছেদ এবং শিশুদের এতিম করে তোলার মতো অমানবিক ঘটনা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত। এসব কর্মকাণ্ড জেনেভা কনভেনশনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, যেখানে যুদ্ধাবস্থায় বেসামরিক জনগণ ও অবকাঠামোর ওপর হামলা নিষিদ্ধ।
জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের শান্তিকামী দেশগুলোকে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান এবং দোষীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নিষেধাজ্ঞা আরোপের অনুরোধ জানানো হয়।
তিনি আরও বলেন, ইসরাইলের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ ছিন্ন করা এবং ইসরাইলে সব পণ্য বয়কটের আহ্বান জানান। ফিলিস্তিনে মানবতার ওপর ইসরাইল বর্বর হামলা চালাচ্ছে। নিরপরাধ নারী শিশুসহ সাধারণ মানুষকে হত্যা করছে। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই। কিন্তু জাতিসংঘ কোনো কিছু বলছে না। বিশ্বের মুসলিম রাষ্ট্রগুলো চুপ করে আছে। আমরা বীরের জাতি। কিন্তু আজ সারাবিশ্বের মুসলমানরা মার খাচ্ছে। নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী মানুষের ওপর ইসরাইলি বাহিনীর অমানবিক ও বর্বরোচিত হামলা এবং ভারতের মুসলিমদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আমির মমিনুল হক সরকার বলেন, অবিলম্বে ফিলিস্তিনি মুসলমানদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা বন্ধে বিশ্ব নেতাদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনের মানুষদের প্রতি সবাইকে সহায়তার হাত বাড়ানোর আহ্বান জানান।
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েল সেনাবাহিনী কর্তৃক নারী, শিশু, স্কুল, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে জঘন্য ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হচ্ছে। এই বর্বরোচিত হামলা সারাবিশ্বে শান্তিকামী সাধারণ মানুষকে ব্যথিত করছে এবং তা মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্যতম অপরাধ। আমরা এই প্রতিবাদী বিক্ষোভ থেকে বর্বরোচিত এই হামলার প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধের দাবি জানাই।
জেলা সেক্রেটারি হাফিজুর রহমান বলেন, ইসরায়েল ফিলিস্তিনের মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করছে। এটা বন্ধ করতে বিশ্বনেতাদের এক হতে হবে। মুসলিম বিশ্ব যদি চায় তাহলে অনতিবিলম্বে এ গণহত্যা বন্ধ হবে। ভারতে জঘন্যভাবে মুসলিমদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চলছে। আমাদের সরকারের প্রতি অনুরোধ, শুধু নিন্দা জানানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে বিশ্ব দরবারে বিষয়টি তুলে ধরেন।
জেলা সহকারী সেক্রেটারি আবু সাঈদ মুন্না বলেন, আমরা প্রতিবাদ জানিয়ে আসলেও বর্বরতা থামছে না। শুধুমাত্র নিন্দা বা প্রতিবাদ জানিয়ে এটা বন্ধ করা সম্ভব নয়। অত্যাচারি ভারত এবং ইসরায়েল এ বর্বরতা চালাতে থাকলে এর প্রতিকার করতে যা যা করা দরকার তার সবটুকু আমরা করবো ইনশাল্লাহ।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি মো. আকরাম হোসাইন তার বক্তব্যে সবাইকে ফিলিস্তিনের মাজলুম জনতার পক্ষে থাকার জন্য আহ্বান জানান।
সোনারগাঁ উপজেলার উত্তরের আমির মাওলানা ইসহাক মিয়া বলেন, মুসলমানদের অনৈক্যর জন্য সারা পৃথিবীতে আজ মুসলমানরা মার খাচ্ছে, নির্যাতিত হচ্ছে।
প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিলে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য ও ইসলামিক এডুকেশন সোসাইটির পরিচালক অধ্যক্ষ ড. ইকবাল হোসাইন ভূঁইয়া, নারায়ণগঞ্জ জেলার আমির আলহাজ্ব মমিনুল হক সরকার, সেক্রেটারি মো. হাফিজুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি আবু সাইদ মো. মুন্না, সোনারগাঁও উপজেলার উত্তরের আমির মাওলানা ইসহাক মিয়া, সেক্রেটারি মাওলানা ইব্রাহিম হাসান, সোনারগাঁও উপজেলার দক্ষিণের আমির মো. মাহবুব মিয়া, সেক্রেটারি মো. আসাদুল ইসলামসহ জেলার ও উপজেলার অন্যান্য নেতারা। এসময় বিভিন্ন উপাজেলা থেকে আগত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নারায়ণগঞ্জ জেলার কয়েক হাজার নেতাকর্মী বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করে ফিলিস্তিনের নির্যাতিত অসহায় মজলুম মানুষের জন্য দোয়া ও মোনাজাত করেন।
প্রসঙ্গত, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বোমা হামলা অব্যাহত রয়েছে। গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের পর থেকে প্রতিদিন গড়ে ১০০ জন ফিলিস্তিনি শিশু নিহত বা আহত হচ্ছে। এ সংখ্যা বিশ্বব্যাপী গভীর উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) ভোরে গাজা উপত্যকাজুড়ে ইসরাইলি বাহিনীর নির্বিচারে বিমান হামলা চালায়। এতে কমপক্ষে ৪০৪ জন নিহত, ৫৬২ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।